ঢাকা মার্চ ৬ ২০২৫:
ট্যুরিস্ট পুলিশকে আরো সক্রিয় করা গেলে দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ঢাকা, ২১ ফাল্গুন (৬ মার্চ):
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, জনবল ঘাটতিসহ ট্যুরিস্ট পুলিশের সমস্যাসমূহ সমাধানের মাধ্যমে এটিকে আরো সক্রিয় করা গেলে পর্যটন খাত তথা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এটি বড় অবদান রাখবে।
উপদেষ্টা আজ রাজধানীর তোপখানা রোডে ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের জনবলের অনেক ঘাটতি রয়েছে। তাদের নিজস্ব কোনো থাকার জায়গা নেই। যানবাহনের সমস্যা-সহ আরো কিছু সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তর একটা ভাড়া ভবনে অফিস পরিচালনা করছে। তাদের নিজস্ব ভবন দরকার। তা সত্ত্বেও তারা কিছু ভালো কাজ করছে। সমস্যাসমূহের সমাধানের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট পুলিশকে আরো সক্রিয় করা গেলে অনেক বেশি বিদেশি পর্যটক আমাদের দেশে আসবে। তিনি বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা অনেক কম হলেও ট্যুরিস্ট স্পটের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই তাদের জনবল বাড়ানো দরকার।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কারো অভিযান চালানোর কোনো অধিকার নেই। মব জাস্টিসের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি জরুরি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে যেন সড়কে চাঁদাবাজি, ছিনতাই না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে উপদেষ্টা ট্যুরিস্ট পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মাইনুল হাসান পিপিএম, এনডিসি। সভায় ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রমের ওপর একটি পাওয়ার-পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়।
কুষ্টিয়ায় শহিদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
ঢাকা, ২১ ফাল্গুন (৬ মার্চ):
আজ কুষ্টিয়া জেলায় শহিদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম এনডিসি, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্র, শহিদ আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ, কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলামসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
এই সময় উপদেষ্টা বলেন, আবরার ফাহাদ তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার এক নতুন ধাপের সূচনা করেছেন। আবরার ফাহাদ শুধু একটা নাম নয় এটি আগ্রাসনবিরোধী লড়াইয়ের একটা জার্নি। যার ধারাবাহিকতায় এসেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান। যাকে সামনে রেখে হাজারো ছাত্র জনতা রাস্তায় নেমে আসে এবং ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করতে সফল হয়।
উপদেষ্টা বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনাগুলোকে জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদদের নামে নামকরণ করা হবে। যার ধারাবাহিকতায় আজ শহিদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে। খেলাধুলার মাধ্যমে একটি মাদকমুক্ত তরুণ সমাজ গঠন করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
একই দিন সকালে উপদেষ্টা কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ১ নং কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙা এলাকায় প্রায় ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে শহিদ আবরার ফাহাদ জামে মসজিদের সম্প্রসারণ কাজের ফলক উন্মোচন করেন এবং শহিদ আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন।
দূষণ, বন ধ্বংস, পাহাড় কাটা এবং কৃষিজমির মাটি লুটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
রংপুর, ২১ ফাল্গুন (৬ মার্চ):
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দূষণ, বন ধ্বংস, পাহাড় কাটা, নদী দখল এবং কৃষিজমির মাটি লুটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ সুরক্ষার প্রশ্নে আমরা কোনো আপস করবো না। দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপদ বাতাস ও খাদ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং এই অধিকার নিশ্চিত করতে প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আজ রংপুরে আয়োজিত ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্ব-সহ আইন প্রয়োগ’ বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, একটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মল বাতাস ও বিশুদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব।
সৈয়দা হাসান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু দূষণের কারণে ৬ থেকে ৮ বছর কমে যাচ্ছে। যদি আমরা আজই কার্যকর ব্যবস্থা না নেই তবে আগামী প্রজন্ম ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে, তিনি প্রশাসনকে আহ্বান জানান পরিবেশগত আইন প্রয়োগে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে এবং দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে।
উপদেষ্টা বিশেষভাবে পলিথিন দূষণের বিরুদ্ধে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ২০০২ সালে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার আমাদের পরিবেশকে ধ্বংস করছে। অবিলম্বে উৎপাদন ও ব্যবহারের কেন্দ্রগুলোতে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ পলিথিন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিস্তার সুরক্ষা আজ সময়ের দাবি। এই নদীর প্রবাহ ঠিক রাখা শুধু পরিবেশের জন্য নয়, কৃষি ও জনজীবনের সুরক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শব্দদূষণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও তিনি গুরুত্ব দেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে হর্ন বাজানো বন্ধে গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনও জরুরি, বলেন তিনি।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অনুমোদনবিহীন ইটভাটা এবং পরিবেশ বিধ্বংসী শিল্পের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য তিনি প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, আজ যদি আমরা আমাদের নদীগুলো রক্ষা না করি, তাহলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। পরিবেশ সুরক্ষা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
কর্মশালায় রংপুর বিভাগের প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আমাদের লক্ষ্য হলো শিশুরা যাতে ভালো পড়তে, লিখতে ও গণিত করতে পারে
— প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
ঢাকা, ২১ ফাল্গুন (৬ মার্চ):
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য হলো শিশুরা যাতে ভালো পড়তে, লিখতে ও গণিত করতে পারে। শিশুদের জন্য এটুকু কাজ যেসব প্রাথমিক স্কুল করতে পারবে ঐসব স্কুলকে মানসম্পন্ন স্কুল বলে প্রচার করা হবে।
উপদেষ্টা আজ ঢাকার মিরপুরস্থ ঢাকা পিটিআই অডিটোরিয়ামে ঢাকা মহানগরীর প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রধান শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
প্রধান শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আমরা কোন লেভেলে আছি, আরো ভালো করতে হলে করণীয় কী, সমস্যা সমাধানের উপায় ঠিক করুন। স্কুল খোলার পর কার্যক্রম শুরু করতে পারেন, প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা চান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোঃ শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোঃ মাসুদ রানা, অতিরিক্ত সচিব মোঃ সাখাওয়াৎ হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আলী রেজা প্রমুখ।
দু’টি পর্বে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে সূত্রাপুর, গুলশান, সেনানিবাস, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও লালবাগ এবং দ্বিতীয় পর্বে কোতয়ালী, ডেমরা, মতিঝিল, রমনা, তেজগাঁও ও ধানমণ্ডি থানার প্রাথমিক স্কুলসমূহ অংশগ্রহণ করে।
উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগরীতে ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
আসন্ন ঈদযাত্রায় নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং ধারণক্ষমতার বাইরে যাত্রী বহনের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা
ঢাকা, ২১ ফাল্গুন (৬ মার্চ):
আসন্ন ঈদযাত্রায় নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং ধারণক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কোনো অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। আজ পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নৌপথে সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ নৌ চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আয়োজিত সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, দায়ী ব্যক্তিদের শুধু জরিমানাই করা হবে না, ঐ লঞ্চের রুট পারমিটও বাতিল করা হবে। কোনো অবস্থাতেই ফিটনেসবিহীন জলযান নৌপথে চলাচল করতে পারবে না। কোনো লঞ্চ বা ফেরি সিরিয়াল ব্রেক করে চলতে পারবে না। নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যেক লঞ্চের নির্ধারিত স্থানে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার রেট চার্ট প্রদর্শন করতে হবে। অন্যথায় মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রায়শই অভিযোগ শোনা যায় ঈদের সময় যাত্রীসাধারণকে জিম্মি করে নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে প্রায় দেড়, দুই গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। এ ধরনের অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সদরঘাট বা অন্যান্য ঘাটে যাদের ইজারা দেয়া হয়েছে তারা যাত্রীদেরকে কোনোরূপ হয়রানি করতে পারবে না। বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে তদারকি করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসময় উপদেষ্টা যেসকল জলযানের ফিটনেস নেই তাদেরকে অবিলম্বে ফিটনেস সনদ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নৌযাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাতে চলাচলকারী লঞ্চে আনসার সদস্য নিযুক্ত করা হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, রাতে চলাচলকারী দূরপাল্লাগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে চারজন করে আনসার সদস্য নিয়োগের জন্য মালিকপক্ষকে বলা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে, কোনো দুর্ঘটনা সংগঠিত হলে মালিকপক্ষ দায়ী থাকবে। আনসার সদস্যদেরকেও তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, বরিশালের মেঘনা নদীসহ অপরাধপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশের পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষ টহল থাকবে।
উপদেষ্টা জানান, ১৫ রমজান হতে ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্মুক্ত রাখতে হবে। রাস্তার উপরে কোনো ভাবেই যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। সংশ্লিষ্ট পুলিশ বাহিনী বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করবে। প্রয়োজনে রেকার দিয়ে অভিযুক্ত বাসগুলোকে সরিয়ে দিতে হবে। ঈদযাত্রার প্রস্তুতি দেখতে উপদেষ্টা সদরঘাটসহ নৌরুটের বিভিন্ন স্পটে আকস্মিক পরিদর্শনে যাবেন বলে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার প্রধানগণ, জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তসহ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে সরকার
-আইন উপদেষ্টা
জেনেভা, ৬ মার্চ:
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত এবং যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তথ্যানুসন্ধান, প্রতিবেদন প্রস্তুত ও প্রকাশের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে ধন্যবাদ দেন। প্রতিবেদনের ফলাফল এবং এ উদ্দেশ্যে সংগৃহীত ও বিশ্লেষিত প্রমাণগুলি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে চলমান জবাবদিহিতা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গতকাল জেনেভায় জাতিসংঘের দপ্তরে ‘বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ওপর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন: ‘এগিয়ে যাওয়ার পথ নির্ধারণ’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় আইন উপদেষ্টা এসব মন্তব্য করেন।
জেনেভায় চলমান মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় এই প্যানেল আলোচনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত বাংলাদেশের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর একটি উপস্থাপনা করেন।
হাইকমিশনার টুর্ক বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় বিগত সরকারের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য এবং পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীন দলের সাথে সংশ্লিষ্টদের সংঘঠিত সহিংসতা পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ সময়ে সংঘটিত কিছু অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে জবাবদিহিতা, সত্য প্রকাশ এবং ক্ষত নিরাময় নিশ্চিত করার নিমিত্ত মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতা এবং সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্যানেল আলোচনায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত শহিদ মুগ্ধ-র সহোদর মীর মাহমুদুর রহমান নিহতদের পরিবারের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। অন্যদিকে, আহতদের সহায়তায় কাজ করা সুশীল নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মিজ ফারজানা শারমিন ইমুও আহতদের গল্প তুলে ধরেন। প্যানেল আলোচনার শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে আইন উপদেষ্টা এবং মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার টুর্ক-এর উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর দেন।
জেনেভাভিত্তিক কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সুশীল নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ প্যানেল আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল গণঅভ্যুত্থানের সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘঠিত নৃশংসতার উপর একটি ফরেনসিক ভিডিও প্রদর্শন। পরে, আইন উপদেষ্টা মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার টুর্ক এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত নৃশংসতা ও অপরাধের জাতীয় জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সম্পৃক্তকরণের বিষয়ে আলোচনা হয়। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো: মাহফুজ আলম, বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ‘মায়ের ডাক’ এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি প্যানেল আলোচনা এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শ্রম ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
– শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা
ঢাকা, ২১ ফাল্গুন (৬ মার্চ):
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের কল্যাণ ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শ্রম ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা গতকাল রাজধানীর রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে শ্রম ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস কর্মকর্তাদের সাথে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অনুষ্ঠান ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা আরো বলেন, সরকার একজন শ্রম অধিকারকর্মীর নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শ্রম অধিকার সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই কমিশন আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের সব শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে শ্রমজীবী মানুষের সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় শ্রম সেক্টরের সমস্যা চিহ্নিত করে এ মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকার ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শ্রম আইন সংশোধন করতে ট্রেড ইউনিয়ন নিয়োগকর্তা এবং উন্নয়ন অংশীদারদের-বিশেষ করে আইএলওসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। আমাদের শ্রম আইন সংশোধনের একটি মূল দিক ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন ও কার্যক্রমের সহজিকরণ। শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব এবং সম্মিলিত দর কষাকষির ওপর গুরুত্বারোপ করে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনকে আরো সহজ এবং স্বচ্ছ করার ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এছাড়া, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ শ্রম আইনের চলমান সংশোধনী বিষয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যদের গোপনীয়তা বজায় রাখার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া, শ্রম সংক্রান্ত মামলার জট কমাতে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ কে কার্যকর করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিষ্পত্তির কার্যক্রম চলমান আছে।
১০ থেকে ২০ মার্চ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৫৩তম অধিবেশনের পূর্বে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস কর্মকর্তাদের শ্রম ইস্যুতে এ অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের লে-অফকৃত ১৪টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরীর নিকট ৫২৫.৪৬ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। আগামী ৯ মার্চ ২০২৫ হতে লে-অফকৃত ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সকল শ্রমিক ও কর্মচারীর পাওনা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে’-শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।